সিলেট প্রতিনিধি: সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং ও জৈন্তাপুর সীমান্ত এলাকায় চোরাকারবারিরা অবৈধ ব্যবসার লাইনম্যান, সীমান্তে দায়িত্বরত বিজিবি সদস্য ও অসাধু পুলিশের সহযোগিতায় তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। জাফলংয়ের মাই টিভির প্রতিনিধি সাংবাদিক হুমায়ুন আহমেদ ভারত থেকে অবৈধভাবে চিনি, পাথর খনি ও অন্যান্য পণ্য বাংলাদেশে প্রবেশ করানোর সুযোগ পেতেন এবং বিশেষ সুবিধা ভোগ করতেন। সম্প্রতি, হুমায়ুনের সহযোগীরা জৈন্তাপুর উপজেলার এক সাংবাদিককে হত্যার চেষ্টা করে।
এই ঘটনায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার (২২ মার্চ, ২০২৫) রাত সাড়ে ১১টায় ঢাকার বংশাল থানার অন্তর্গত চকবাজারস্থ ৭৮/৩সি নজিমউদ্দিন রোড, চানখারপুল ক্রসিং এলাকা থেকে র্যাব-৯ ও র্যাব-১০ এর যৌথ অভিযানে সাংবাদিক হুমায়ুন আহমেদকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই সিলেটের চার ভুয়া সাংবাদিক ও ঢাকার এক পত্রিকার সম্পাদক জাফলংয়ের সব অবৈধ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নেয়।
সূত্র জানিয়েছে, ঢাকাভিত্তিক দৈনিক বিকেল বার্তা পত্রিকার সম্পাদক আগের আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলের প্রভাব খাটিয়ে সিলেটের জাফলংসহ বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় অবৈধ পণ্যের লাইনম্যান হিসেবে মাসিক কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায় করতেন। তার সহযোগীদের মধ্যে ছিলেন দৈনিক বিকেল বার্তা‘র সিলেট ব্যুরো প্রধান কামরুল হাসান জুলহাস, জেলা প্রতিনিধি আব্দুল আলীম রানা, এবং স্টাফ রিপোর্টার লাকি আক্তার ওরফে লাকি আহমেদ।
জানা গেছে, সাংবাদিক আব্দুল আলীম রানা পেশায় একজন ডাকাত, লাকি যুব মহিলা লীগের নাম ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেইল করে, আর কামরুল হাসান জুলহাস মালাম পার্টির নেতা। পুরো সিলেট অঞ্চলের প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতেন আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এম মান্নানের নাতি মোহাম্মদ মাহতাব উদ্দিন তালুকদার, যিনি দৈনিক হাওরাঞ্চলের কথা পত্রিকার সম্পাদক। জাফলংয়ের সাংবাদিক হুমায়ুন আহমেদের কারাগারে যাওয়ার পর বর্তমানে ৫ সাংবাদিক গোয়াইনঘাট, জাফলং ও জৈন্তাপুরের সব অবৈধ অর্থ সংগ্রহ করছে। কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বললেই দৈনিক বিকেল বার্তা, চ্যানেল ২৬, তালাশ টিভি, এবং দৈনিক হাওরাঞ্চলের কথা পত্রিকার ফেসবুক পেজে ভুয়া সংবাদ প্রচার করে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখানো হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, তারা ভারত থেকে মদ, ফেনসিডিল, অস্ত্র, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের স্মার্টফোন, চিনি, চা পাতা, কসমেটিকস, কিট, শাড়ি, থ্রিপিস, লেহেঙ্গা, টি-শার্ট চোরাই পথে আনছে। বিজিবি সদস্যরা এসব অবৈধ ব্যবসার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে উল্টো তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে এবং চোরাকারবারিদের সহায়তা দিচ্ছে। বিজিবি ও পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ উঠেছে।
একসময় সীমান্ত এলাকার অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে পারত না সাংবাদিক হুমায়ুনের কারণে। এখন সেই সাংবাদিকের জন্য আরও অনেক মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে। তাদের বিশাল বাহিনী রয়েছে, যারা সবসময় মাদকাসক্ত অবস্থায় দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করে, এবং তাদের সঙ্গে বিজিবি ও পুলিশের সদস্যরাও থাকে। তারা রাতদিন ভারত থেকে নামমাত্র দামে চোরাই পণ্য এনে বাজারজাত করছে।
