আলভী মাহমুদ আলিফ প্রতিনিধি :
রাজধানীর গুলশান এবং বনানী এলাকার ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসায়ী সুমন মিয়া সুমনকে গত ২০ মার্চ ২০২৫ রোজ বৃহস্পতিবার আনুমানিক রাত ৯.৩০ মিনিটের সময় রাজধানীর গুলশান থানাধীন গুলশান-১ পুলিশ প্লাজার সামনে প্রকাশ্যে কয়েকজন অজ্ঞাতনামা অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গুলি করে পালিয়ে যায়। ঘটনার পর ভিকটিম সুমন’কে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। উল্লিখিত হত্যা কান্ডের ঘটনায় গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু হয়(গুলশান থানার হত্যা মামলা নং-৩২, তারিখ-২১/০৩/২০২৫খ্রিঃ, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড-১৮৬০)।
উক্ত হত্যা কান্ডের ঘটনাটি দেশের বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স এবং প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচার করা হয় এবং এটি সারা দেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব-১, সিপিসি-১ এর একটি অভিযানিক দল উক্ত হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন এবং আসামীদের গ্রেফতারের জন্য গোয়েন্দা নজরদারী শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-১, সিপিসি-১ প্রযুক্তিগত বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত এবং মাঠ পর্যায়ের তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে মামলার রহস্য উদঘাটনে তৎপর হয়। জনৈক- মেহেদী মোঃ ওয়াসির মাহমুদ সাঈদ বড় সাঈদ এর মাধ্যমে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করে বিগত কয়েক বছর যাবত গুলশান ও বাড্ডা এলাকায় চাঁদাবাজী করে আসছিল। বিগত ৫ ই আগষ্ট ২০২৪ ইং সালে সরকার পতনের পর মেহেদী পালিয়ে যায়। মেহেদী পালিয়ে গিয়ে তার বাহিনীর সদস্য মোঃ ওয়াসির মাহমুদ সাঈদ বড় সাঈদ এর মাধ্যমে গুলশান ও বাড্ডা এলাকার চাঁদা সংগ্রহ করত। কিন্তু সরকার পতনের পর অন্য একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ রবিন গ্রুপের হয়ে সুমন গুলশান বাড্ডা এলাকায় চাঁদাবাজী শুরু করে। গুলশান এলাকার বিভিন্ন মার্কেটের দোকানে চাঁদাবাজীর উক্ত বিষয় নিয়ে মেহেদী গ্রুপের সাথে রবিন গ্রুপের সুমনের বিরোধের সৃষ্টি হয়।
উক্ত বিরোধের কারণে মেহেদী গ্রুপের এর প্রধান মেহেদীর নির্দেশে সাঈদ সুমনকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। মামলার ঘটনার অনুমান ৮/১০ দিন পূর্বে সাঈদ সুমনকে হত্যার উদ্দেশ্যে বিল্লাল ও মামুনের নেতৃত্বে মেহেদী গ্রুপের ৪/৫ জন সন্ত্রাসী দিয়ে একটি কিলার গ্রুপ গঠন করে। মেহেদী গ্রুপের সদস্যরা প্রতিদিন সুমনের উপর নজর রাখে। ঘটনার দিন ২০ মার্চ ২০২৫ ইং সন্ধ্যার সময় মেহেদী গ্রুপের একটি কিলার গ্রুপ সাঈদ এর বাসায় মিটিং করে এবং তার বাসা হতে অস্ত্র নিয়ে গুলশান এলাকায় যায়। গুলশান এলাকায় গিয়ে সুমনকে গোপনে খুজতে থাকে এবং রাত্র অনুমান ৯.৩০ মিনিটের সময় তার বাহিনীর সদস্যরা সুমনকে গুলশান-১ পুলিশ প্লাজার সামনে ডাক্তার ফজলে রাব্বি পার্কের সামনে বসা অবস্থায় দেখতে পেয়ে গুলি করে। সুমন গুলি খেয়ে দৌড়ে পালাইয়া যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীরা তাকে আরো কয়েকটি গুলি করে। সুমনের মৃত্যু নিশ্চিত করে সন্ত্রাসীরা কৌশলে পালিয়ে যায়। র্যাব-১ এর অভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, ঘটনার মাস্টারমাইন্ড মোঃ ওয়াসির মাহমুদ সাঈদ বড় সাঈদ(৫৯) ঘটনার পর গ্রেফতার এড়ানোর জন্য গা ঢাকা দিয়েছে। র্যাব-১ এর আভিযানিক দল বিষয়টি আমলে নিয়ে সাঈদকে গ্রেফতারের জন্য গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় ২৫ মার্চ ২০২৫ ইং দুপুর আনুমানিক ২:৩০ মিনিটের সময় র্যাব-১ এর অভিযানিক দল র্যাব-৮ এর আভিযানিক দলের সহযোগিতায় ঘটনার মাস্টারমাইন্ড মোঃ ওয়াসির মাহমুদ সাঈদ বড় সাঈদ(৫৯), পিতা-মৃত এম এ আজিজ, মাতা-মৃত সালেহা বেগম, সাং-সঞ্জয়পুর, থানা-ঝালকাঠি সদর, জেলা- ঝালকাঠি এ/পি- রোড-১২, বাড়ী-১৩, লিংক রোড মধ্য বাড্ডা, ডিএমপি, ঢাকা’কে পটুয়াখালী থানাধীন পটুয়াখালী চৌরাস্তা এলাকা হতে আটক করা হয়। গ্রেফতারকৃত সাঈদ জানায় যে, এই কিলিং মিশনে মামুন বেলাল সহ আরও কয়েকজন এই হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশগ্রহণ করে। সাঈদের তথ্য মতে একই তারিখ অর্থাৎ ২৫ মার্চ ২০২৫ ইং ১৮.৪৫ ঘটিকায় মামুন বেলাল (৪২), পিতা- মৃত আঃ কাদের, মাতা- ছাবিনা বেগম, সাং- মুরাদ নগর, থানা-মুরাদ নগর, জেলা- কুমিল্লা’কে গাজীপুর জেলার টঙ্গী পূর্ব থানা এলাকা হতে আটক করে র্যাব-১। ঘটনার সাথে জড়িত বাকী পলাতক আসামীদের গ্রেফতার এবং উক্ত ঘটনায় ব্যবহৃত অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে। গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়ের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।