আলভী মাহমুদ আলিফ প্রতিনিধি :
মাহে রমজান শেষে আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর/২০২৫ কে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কিশোর গ্যাং, চাঁদাবাজ, অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি ও ছিনতাইকারী চক্রের তৎপরতা বেপরোয়াভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা নিরীহ মানুষকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে টাকা-পয়সা, ব্যাগ, মোবাইল, স্বর্ণালংকারসহ বিভিন্ন মূল্যবান দ্রব্যাদি ছিনতাই করে জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলছে। এরই প্রেক্ষিতে ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনতে র্যাব-৯, সিলেট গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে এবং শহরের বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই এর সাথে জড়িত সংঘবদ্ধ চক্রকে সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। এরই ধারাবাহিকতায় প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৯, সিলেট এর একাধিক অভিযানিক দল অদ্য ২৮ মার্চ ২০২৫ ইং তারিখ র্যাব-৯, সিলেটের আওতাধীন সিলেট মহানগরী, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ ছিনতাই চক্রের ১৭ জন সক্রিয় দলের সদস্য গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, সিলেট মহানগরী, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের বিভিন্ন জনবহুল এলাকায় একাধিক সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্র সক্রিয় রয়েছে। এসব ছিনতাইকারী সাধারণ পথচারী, রিকশা আরোহী, সিএনজি আরোহী, যানজটে থাকা যানবাহনের যাত্রীদের টার্গেট করে তাদের সুবিধাজনক স্থান ও সময়ে ছিনতাই কার্যক্রম পরিচালনা করে। সিএনজিতে যাত্রী বেশে অবস্থান নিয়ে সুবিধাজনক স্থানে সিএনজি থামিয়ে সিএনজিতে থাকা অন্যান্য যাত্রীদের কাছ থেকে মোবাইল, মানিব্যাগ কিংবা পার্স ছিনিয়ে নেয়। ছিনতাইকারীদের নেতৃত্বে রয়েছে উঠতি বয়সি কিছু তরুণ।
এরা নগরী/ জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে, পাড়া মহল্লায় আড্ডা দেয়। সুযোগ বুঝে তারা ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত করে। অনেক সময় তারা ভিকটিমকে ভয়ভীতি কিংবা ধারালো অস্ত্র প্রদর্শন করে সর্বস্ব লুটে নেয় এবং বাধা দিলে প্রাণঘাতী আঘাত করতেও দ্বিধাবোধ করে না। খুবই অল্প সময়ে ছিনতাই শেষে ছিনতাইকারীরা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা ছিনতাইকৃত অর্থ দিয়ে মাদকদ্রব্য সেবন বা অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। উল্লেখ্য যে, কিছু কিছু ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা যাত্রীবেশে উঠে জনবিহীন এলাকায় যেয়ে সিএনজি ছিনতাই করে থাকে।
গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা- ১। বাদল মিয়া কাউছার (২৭), পিতা- মৃত দুলাল মিয়া, সাং-সুজাতপুর, থানা- বানিয়াচং, জেলা- হবিগঞ্জ, ২। সুহেল আহম্মদ রকি (২০), পিতা- মোঃ আলা উদ্দিন, সাং- ভুলকর, থানা- দিরাই, জেলা- সুনামগঞ্জ, ৩। মোঃ সাজা মিয়া (৩১), পিতা- আলমগীর মিয়া, সাং- সওদাগরটোলা, থানা- কোতয়ালী, জেলা- সিলেট, ৪। তায়েফ আহম্মদ (২৬), পিতা- সিরাজুল ইসলাম, সাং- পূর্ববীর গাঁও, থানা- সদর, জেলা- সুনামগঞ্জ, ৫। শেখ মনির কালা মনির (৩০), পিতা- শেখ খলিল মিয়া, সাং- হেতিমগঞ্জ, থানা- গোলাপগঞ্জ, জেলা- সিলেট, ৬। খোরশেদ মিয়া (২৭), পিতা- রনজু মিয়া, সাং- কুনিহাটি, থানা- কোতয়ালী, জেলা- ময়মনসিংহ, ৭। আকাশ হোসেন (২১), পিতা- সামছুল হক, সাং- টুকেরগাঁও, থানা- ছাতক, জেলা- সুনামগঞ্জ, ৮। মোঃ শাহীন (৩২), পিতা- মন্নাফ মিয়া, সাং- দক্ষিণ মোড়াইল, থানা- সদর, জেলা- ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ৯। সায়মন (২২), পিতা- সফিক, সাং- কান্দিরপাড়, থানা- সদর, জেলা- ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ১০। রমজান আল আমিন (২১), পিতা- মন মিয়া, সাং- কাজিরপাড়া, থানা- সদর, জেলা- ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ১১। মাসুম মিয়া (৩৫), পিতা- শহীদ সিকদার, সাং- ছত্তরপুর, থানা- বিজয়নগর, জেলা- ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ১২। আশাদুল মিয়া (৪২), পিতা- হানিছ মিয়া, সাং- ফুল বাড়ী, থানা- শ্রীমঙ্গল, জেলা- মৌলভীবাজার, ১৩। শামীম মিয়া (৩০), পিতা-আবুল কালাম, সাং-কাকিয়াপুর, থানা-শ্রীমঙ্গল, জেলা-মৌলভীবাজা, ১৪। মোঃ বাদশা মিয়া (৩০), পিতা-মোঃ লাল মিয়া, সাং-পশ্চিম তেঘরিয়া, থানা-সদর, জেলা-সুনামগঞ্জ, ১৫। দেলোয়ার হোসেন (৪৮), পিতা-মৃত সোনা মিয়া, সাং-শিলদুয়া, থানা-বিশ্বম্ভরপুর, জেলা-সুনামগঞ্জ। ১৬। আজাদ (৩০), পিতা-মৃত আব্দুল মুকিত, সাং-ইব্রাহিমপুর, থানা-সদর, জেলা-সুনামগঞ্জ ও ১৭। সুমন (২২), পিতা-আজিজ মিয়া, সাং-মহকুড়া, থানা-বিশ্বম্ভরপুর, জেলা-সুনামগঞ্জ ১৬ ও ১৭ নং আসামীদ্বয়কে ছিনতাইকৃত সিএনজিসহ আটক করা হয়। উক্ত চক্রের সদস্যদের মধ্যে প্রায় সকলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মাদক ও ছিনতাইসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে গ্রেফতারকৃতদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। আসন্ন ঈদে সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জ বাসী এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে সিলেটে আগত ও সিলেট হতে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে যাওয়া ব্যক্তিরা যাতে নিরাপদে ঈদের কেনাকাটা করে নির্বিঘ্নে বাড়ি যেতে পারে এ লক্ষ্যে ছিনতাইকারী চক্রের বিরুদ্ধে র্যাব-৯, সিলেট এর গোয়েন্দা তৎপরতা এবং চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে।
