জামায়াতে ইসলামী’র সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আজমের পুত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) আব্দুল্লাহিল আমান আজমীকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার (২৭ জানুয়ারি) হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এক সেনা কর্মকর্তা সংস্থাটিকে জানান, “আমি আর্মিতে আজমীর সহকর্মী ছিলাম। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখে মায়া হলো। তাই আমি শেখ হাসিনার কাছে তার মুক্তির জন্য অনুরোধ করতে শুরু করি। কিন্তু তিনি বরাবরই তা প্রত্যাখ্যান করেন। এক পর্যায়ে তিনি (শেখ হাসিনা) আজমীকে হত্যার পরামর্শও দেন। কিন্তু আমি তা করিনি। এরপর থেকে আমি তার মুক্তির বিষয়ে কথা বলা বন্ধ করে দেই।”
২০১৬ সালে আটক হন আমান আজমী, মীর আহমদ বিন কাসেম (আরমান) ও হুম্মাম কাদের চৌধুরী। তারা তিনজনই বিরোধী দলের শীর্ষস্থানীয় তিন নেতার সন্তান। তাদের বাবাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের সহযোগী থাকার অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল।
পরবর্তী সময়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মামকে এই শর্তে মুক্তি দেওয়া হয় যে তিনি তার বেআইনি আটকের বিষয়ে কারও সঙ্গে কথা বলবেন না। হাসিনার পতনের পর তিনি কেবল হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে রাজি হন। তিনি জানান, “আমি যে ভবনে ছিলাম, সেখানে অনেকগুলো কক্ষ ছিল, যা বন্দীদের দ্বারা পূর্ণ ছিল। সেখানে আরও অনেক লোক ছিল।”
প্রতিবেদনে জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ছেলে মীর আহমদ বিন কাসেমের (আরমান) কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি তার বাবার আইনজীবী দলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট তাকে স্ত্রী, বোন ও সন্তানদের সামনে থেকে সাত-আটজন কর্মকর্তা তুলে নিয়ে যান। এ সময় তিনি নিজের গ্রেফতারি পরোয়ানা দেখাতে বলেন, কিন্তু কর্মকর্তারা তা প্রত্যাখ্যান করে জোরপূর্বক বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে যান। তিনি প্রতিবাদ করলে এক কর্মকর্তা বলেন, “দয়া করে আমাদের নিষ্ঠুর আচরণ করতে বাধ্য করবেন না।”
আরমানের ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা দুঃখ প্রকাশ করে জানান, “তিনি আশঙ্কা করেন যে আদেশ অমান্য করলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে।” গুমের সঙ্গে যুক্ত এক শীর্ষ কর্মকর্তা আরমানের বিষয়ে বলেন, “এ ধরনের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক এবং সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেই নেওয়া হয়।”
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, যখন তিনি তার ইউনিটে যোগ দেন, তখন তাকে জানানো হয় যে আজমী, আরমান এবং হুম্মাম কাদের চৌধুরী বিরোধী দলের শীর্ষস্থানীয় তিন নেতার সন্তান। তাদের মুক্তির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে শেখ হাসিনাকেই।