পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘‘সংস্কারের ক্ষেত্রে আমাদের জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য যদি কিছুটা ছাড়ও দিতে হয়, সেই প্রস্তুতি আমাদের নিতে হবে।’’
তিনি এসব কথা বলেন গতকাল শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে ‘ঐক্য কোন পথে’ শীর্ষক অধিবেশনে অংশ নিয়ে।
ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে দুদিনব্যাপী এই সংলাপের প্রথম দিন ছিল গতকাল। ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ (এফবিএস) সংলাপটির আয়োজন করে।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘‘ঐক্যের কথা বললে বুঝতে হবে, কী কী বিষয়ে ঐক্য চাই। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য ঐক্য প্রয়োজন, রাজনৈতিক সংস্কারের জন্য ঐক্য প্রয়োজন, তরুণ প্রজন্মের প্রত্যাশা রাষ্ট্র পরিচালনায় অন্তর্ভুক্তির জন্য ঐক্য প্রয়োজন। জনগণকে সম্পৃক্ত করেই মতৈক্যে পৌঁছাতে হবে।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘যদি আমরা সংস্কারের বিষয়ে একমত হতে পারি, তবে একে অপরকে প্রতিপক্ষ ভাবার কোনো কারণ নেই। সংস্কারের জন্য কী কী বিষয় প্রয়োজন, কে করবে, কত দিনে করবে এবং কীভাবে তা কার্যকর হবে, এসব সিদ্ধান্ত আগামী দিনে আমাদেরই নিতে হবে।’’
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘‘সংস্কারে পিছপা হলে চলবে না। আমাদের সবার সহযোগিতা প্রয়োজন, যাতে সংস্কারের মাধ্যমে জনমতের প্রতিফলন দেখা যায়। জনমতের প্রতিফলন না হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা কঠিন হবে। কারণ মানুষের প্রত্যাশার সঙ্গে যদি আমাদের ব্যবধান থাকে, তবে বারবার রাজনৈতিক অস্থিরতা ও জটিলতার মধ্যে পড়ব।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘এটা শুধু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নয়, এ পরিবর্তনের দায়িত্ব আমাদের সবার। কাগজে-কলমে সংস্কার হলে হবে না, সংস্কারের চর্চা করতে হবে, যাতে জনগণ এর সুফল পায়। কেবল নেতৃত্বে পরিবর্তন হলেই সব কিছু বদলে যাবে না। যতক্ষণ না মনোজগতে পরিবর্তন আসে, ততক্ষণ এসব সম্ভব নয়। আমাদের সবাইকে উপলব্ধি করতে হবে যে, আমরা কেউ ক্ষমতায় যেতে নয়, দায়িত্ব পালনে আস্থা নিয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’’
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘‘ক্ষমতার প্রয়োগে জনগণের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। ঐক্য কোন পথে, এই প্রশ্নের উত্তর হলো, সংস্কারের যে প্রয়োজন রয়েছে, তা আমরা সবাই মেনে নিয়েছি। ঐক্যের পথ সরল নয়, কঠিন হবে, তবে সবাইকে শোনার মাধ্যমে আমাদের ঐক্যের পথে এগোতে হবে। সংস্কারের প্রয়োজন আমরা মেনে নিয়েছি, তবে কোন পথে, কতদিনে হবে, সেটি নিরূপণ করা জরুরি।’’
তিনি বলেন, ‘‘রাজনীতির রূপরেখা বদলানো বা বৈষম্য দূর করার যাত্রা সহজ হবে না। কঠিন পথ দিয়ে আমাদের যেতে হবে, তবে ধৈর্য রাখতে হবে। প্রথাগত বিষয়গুলো একদিনে পরিবর্তন হবে না।’’
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘‘তরুণ নেতৃত্বে আমি সব সময় আস্থাশীল ও আশাবাদী। বড় পরিবর্তন আনার সক্ষমতা তরুণদেরই রয়েছে। তারা নতুন করে ভাবতে শিখেছে এবং সবকিছু নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে শিখেছে। তবে শুধু নেতৃত্বের পরিবর্তনই যথেষ্ট নয়। পরিবর্তন একটি প্রক্রিয়া, এবং কেবল আইন করলে তা হবে না। এ প্রক্রিয়া চালু রাখতে আমাদের নিজেকেই প্রশিক্ষিত হতে হবে। এখানে তরুণদের মতো অভিজ্ঞদেরও ভূমিকা থাকবে।’’
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, সরকার দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছে। ‘‘সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট পাওয়ার পর আমরা পাবলিক এঙ্গেজমেন্টে (জনসম্পৃক্ততা) চলে যাব। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ঐক্যমতের জন্য একটি কমিশন গঠন করা হবে,’’ বলেন রিজওয়ানা হাসান।
তিনি আরও বলেন, ‘‘যদি সংস্কার সফলভাবে করা যায়, তবে এটি বর্তমান এবং ভবিষ্যত রাজনৈতিক নেতাদের জন্য ভালো হবে। কারণ আমরা বুঝতে পারব জনগণের প্রত্যাশা কী এবং সেগুলোর বিপরীতে কীভাবে কার্যকরভাবে ডেলিভারি করতে হবে।’’
ঐক্যের পথ কঠিন মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, ‘‘ঐক্যের পথ সরল নয়, কঠিন হতে পারে। তবে আমাদের দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হতে হবে, যাতে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারি।’’